১৯৯২: এক ভয়াল স্মৃতি – বাংলাদেশের হিন্দুদের আর্তনাদ

Blog post description.

1/31/20251 min read

১৯৯২: এক ভয়াল স্মৃতি – বাংলাদেশের হিন্দুদের আর্তনাদ

১৯৯২ সাল—একটি বছর যা বাংলাদেশের হিন্দুদের মনে এক চিরস্থায়ী দুঃস্বপ্নের ছাপ ফেলে গেছে। ভারতবর্ষে ঘটে যাওয়া এক ঘটনার ছুতো ধরে বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর যে নৃশংসতা চালানো হয়েছিল, তা আজও মানবতার বিরুদ্ধে এক কলঙ্কচিহ্ন হয়ে রয়ে গেছে।

বাবরী মসজিদ ধ্বংসের অভিযোগ এনে, বাংলাদেশের মুসলিম উগ্রবাদীরা পরিকল্পিতভাবে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। নির্বিচারে হত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ—এই দানবীয় কর্মযজ্ঞ যেন এক রক্তাক্ত অধ্যায় হয়ে ধরা দেয় ইতিহাসের পাতায়।

ঢাকেশ্বরী মন্দিরের কান্না

১৯৯২ সালের ৭ ডিসেম্বর, ঢাকার জাতীয় মন্দির ঢাকেশ্বরী মন্দির আক্রান্ত হয়। এটি ছিল কেবল শুরু। আগেও ১৯৯০ সালে বাবরী মসজিদ ইস্যুতে এই মন্দিরের উপর আক্রমণ হয়েছিল। মন্দিরের গর্ভগৃহে ঢুকে প্রতিমা ভেঙে ফেলা হয়, ধর্মীয় গ্রন্থ ছিঁড়ে ফেলা হয়, দেব-দেবীর মূর্তিগুলোকে লাথি মেরে ফেলে দেওয়া হয়।

এই হামলার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকার আরও অনেক হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় শুরু হয় তাণ্ডব। ভোলানাথগিরি আশ্রমে হামলা চালিয়ে লুটপাট ও ধ্বংসযজ্ঞ করা হয়। পুরনো ঢাকার হিন্দু মালিকানাধীন স্বর্ণের দোকানগুলো লুট করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

ক্রিকেট মাঠেও হিন্দুদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ

৭ ডিসেম্বরের দিনেই ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামে চলছিল সার্ক চার জাতির ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। ভারত ও বাংলাদেশের এ-দলের ম্যাচ চলাকালীন প্রায় ৫,০০০ উন্মত্ত মুসলিম জনতা মাঠে প্রবেশ করে লোহার রড, বাঁশের লাঠি, ছুরি ও রাম দা নিয়ে আক্রমণ করে। খেলা বন্ধ হয়ে যায়, নিরাপত্তার অভাবে টুর্নামেন্টও পরিত্যক্ত হয়। এ যেন খেলাধুলার আঙিনাতেও এক উন্মাদ বিদ্বেষের বহিঃপ্রকাশ।

চট্টগ্রামের আগুনে পোড়ানো গ্রাম

৮ ডিসেম্বর, চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, মীরসরাইসহ বিভিন্ন হিন্দু অধ্যুষিত গ্রাম সম্পূর্ণরূপে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। মন্দির ভাঙা হয়, তুলসীধাম ও পঞ্চাননধামের মতো পবিত্র স্থানও রেহাই পায়নি। নারীদের সম্মানহানি করা হয়, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়, অনেককে জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করা হয়।

কুতুবদিয়া ও উপকূলীয় অঞ্চলের বিভীষিকা

কুতুবদিয়া উপজেলার ১৪টি মন্দির ধ্বংস করা হয়, শত শত বাড়িতে লুটপাট চালানো হয়। নিরপরাধ মানুষদের গৃহহীন করে দেওয়া হয় শুধুমাত্র ধর্মের কারণে।

এই নৃশংসতার বিচার কোথায়?

১৯৯২ সালের এই ভয়াবহ ঘটনার পর আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থা, কোনো রাষ্ট্র, এমনকি বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকেও সুবিচারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আক্রান্তরা শুধু নিজেদের শূন্য হাতে শ্মশানের আগুনের মতো অসহায়ভাবে তাকিয়ে থেকেছে।

আজও কি নিরাপদ?